নিজস্ব প্রতিবেদক:
সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীতে বকেয়া পাওনাদির দাবিতে পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সাথে শ্রমিকদের সংঘর্ষে পুলিশ-সাংবাদিকসহ ২০জন আহত হয়েছে । শনিবার সকাল ৭’টা থেকে আদমজী ইপিজেডের সামনে কুনতুং এ্যাপারেলস লিঃ (ফ্যাশন সিটি) নামে একটি পোশাক কারখানার চাকুরীচ্যুত শ্রমিকরা বকেয়া পাওনাদির দাবিতে সড়কে অবস্থান নিলে এক পর্যায়ে পুলিশ ও আনসারদের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে শ্রমিকরা।
শ্রমিকরা জানায়, মালিকপক্ষের দেওয়া সময় অনুযায়ী শনিবার সকাল ৭’টায় আদমজী ইপিজেডের প্রধান গেইটের সামনে ডেমরা-আদমজী-নারায়ণগঞ্জ সড়কে অবস্থান নেয় প্রায় ২’শতাধিক পোশাক শ্রমিক। শ্রমিকদের অভিযোগ, এসময় ইপিজেডে নিয়োজিত আনসার সদস্যরা নারী ও পুরুষ শ্রমিকদের উপর লাঠিচার্জ করে। প্রায়ই শ্রমিকদের সাথে আনসার সদস্যরা অশালীন আচরণ ও নির্যাতন করে বলে অভিযোগ শ্রমিকদের। বেপজার কর্মকর্তারা কারখানা মালিকদের পক্ষে কাজ করে। বেপজা-পুলিশ কারও কাছেই তারা বিচার পায়না।
পরে ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সড়কে আগুন দিয়ে সড়ক অবরোধ করে। পরে দুই দফায় নারায়ণগঞ্জ পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (‘ক’ সার্কেল) মেহেদী ইমরান সিদ্দিকী ও সহকারী কমিশনার (সিদ্ধিরগঞ্জ সার্কেল) রেজা মোঃ গোলাম মাসুম প্রধান মালিকপক্ষের সাথে কথা বলে সমস্যা সমাধানের জন্য আন্দোলনরত শ্রমিকদের আশ^াস দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। কিন্তু শ্রমিকরা তাদের কথা মেনে না নিয়ে আরো ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। এক পর্যায়ে পুলিশ ও আনসারদের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে শ্রমিকরা। এসময় শ্রমিকরা ইট-পাটকেল ছোড়ে। পুলিশও পাল্টা টিয়ারসেল ও গুলি নিক্ষেপ করে। পরে শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। প্রায় ১১’টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় পুলিশ। এতে পুলিশ-সাংবাদকিসহ প্রায় ২০ জন আহত হয়। পোশাক শ্রমিক রিনা আক্তার বলেন, আমি ৬’বছর ঐ কারখানায় কাজ করেছি। কিন্তু আমি আমার বকেয়া পাওনা এখনো পাইনি। ৬’বছরে প্রায় ২’লক্ষ টাকা জমেছে বলে এই নারীর শ্রমিকের দাবি। তানিয়া নামে আরেক শ্রমিক জানায়, ৯’বছরে তারও প্রায় ২’লাখের বেশি টাকা জমেছে।
সহকারী কমিশনার (সিদ্ধিরগঞ্জ সার্কেল) রেজা মোঃ গোলাম মাসুম প্রধান বলেন, শ্রমিকরা জানিয়েছে মালিকপক্ষ তাদেরকে বারবার সময় দিয়েও পাওনা পরিশোধ করছেনা। শ্রমিকদের পাওনা আদায়ে মালিকপক্ষের সাথে কথা বলার আশ^াস দিলেও শ্রমিকরা তা মেনে নেয়নি।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (‘ক’ সার্কেল) মোঃ মেহেদী ইমরান সিদ্দিকী জানান, শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে সড়কে আগুন দিয়ে সড়ক অবরোধ করে এবং ইট-পাটকেল ছুড়তে শুরু করে। পুলিশও শর্টগানের গুলি ছোড়ে এবং টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে শ্রমিকদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়। পরে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। তবে শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে মালিকপক্ষ কিছুই জানায়নি।
এ বিষয়ে বেপজার জিএম আহসান কবির জানান, কারখানা বিক্রি করে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করবে বলে জানিয়েছে ফ্যাশন সিটির মালিকপক্ষ। তবে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে কোন সময় বা তারিখ দেওয়া হয়নি।